‘লোভে পইড়া পোলাডারে মাইরা ফালাইছি, আমার হাসনাইনরে ফিরাইয়া দেন’

‘আমার বাবু হাসনাইনকে ফিরিয়ে দিন, আমি আর কাজে দিবো না। আমার হাসনাইন স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে’
শুক্রবার (৯ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে আর্তনাদ করে কথাগুলো বলছিলেন মা তানিয়া। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপ-এর কারখানায় আগুনের পর থেকে নিখোঁজ তানিয়ার ছেলে হাসনাইন।
বিলাপ করতে করতে সাংবাদিকদের তানিয়া জানান, তাঁর ছেলে হাসনাইন ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আমিনাবাদ কবি মুজাম্মেল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় তিন মাস আগে প্রতিবেশী মোতালেব-এর প্ররোচনায় পড়ে হাসনাইনকে ৫ হাজার টাকা বেতনে হাসেম ফুডসের সেমাই কারখানায় পাঠান। এই কারখানার চতুর্থ তলায় সেমাই প্যাকেজিংয়ের কাজ করতো সে। কিন্তু চাকরিতে যোগ দেয়ার পর একবারও বেতন পায়নি।
কেঁদে কেঁদে তানিয়া বলেন, আমি লোভে পইড়া পোলাডারে মাইরা ফালাইছি। আমার হাসনাইনরে ফিরাইয়া দেন। আমি আর কামে দিমু না। আমার হাসনাইন স্কুলে যাইবো, পড়াশোনা করবো।
মর্গের সামনেই দেখা মেলে মোতালেব-এর। তাকে দেখেই ঘিরে ধরেন নিখোঁজদের স্বজনরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ওই কারখানায় চুক্তিতে কর্মী দিতেন। প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে কমিশন পেতেন। তার দেওয়া ১৮ জন কর্মীর মধ্যে ১২ জনই বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন।
জানতে চাইলে মোতালেব বলেন, আগুন দেখেই আমি সবাইকে ফোন করে ছাদে চলে যেতে বলেছি। যে ৬ জন গেছে তাঁরা বেঁচে ফিরেছে, বাকিদের সন্ধান এখনো মিলেনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপ-এর ওই কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ভবনে তল্লাশি চালিয়ে ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ঢামেকে আহত অবস্থায় আনা আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।