গ্যাস বিক্রি করিনি বলে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসতে পারিনি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের মনে আছে ২০০০ সালে আমার কাছে প্রস্তাব এসেছিল গ্যাস বিক্রি করার, আমি রাজি হইনি। খেসারত দিতে হয়েছিল। ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল ক্ষমতায় আসলে তিনি গ্যাস বিক্রি করবেন।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শিল্প উন্নয়ন করতে হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে, সার উৎপাদন করতে হবে, দেশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ দিতে হবে, কাজেই আমাকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে হবে।

‘দেশের অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটুকু যদি বাড়ানো না হয়, তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ আছে- হয় আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, সেজন্য এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব। অর্থনীতির উন্নতি হবে না। যদি উন্নতি চান এটাকে মেনে নিতে হবে। শুধু আমরা না, গ্যাস আমদানিকারক দেশও এটা মেনে নেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি এবং গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভারতে গ্যাসের দাম কমানো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আন্দোলন করেছেন। বলেছেন ভারতে গ্যাসের দাম কমেছে। কিন্তু ভারতে গ্যাসের দাম কত?

তিনি বলেন, ভারতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালিতে স্থানভেদে ৩০ থেকে ৩৭ টাকা, শিল্পে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, সিএনজি ৪৪ টাকা আর বাণিজ্যিকে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা।

আর বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গৃহস্থালিতে ১২.৬০ টাকা, শিল্পে ১০.৭০ টাকা সিএনজি ৪৩ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ২৩ টাকা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এলএনজি নিয়ে এসে যেটা ৬১.১২ টাকা, সেটা আমরা দিচ্ছি ৯.৮০ টাকায়। তারপরেও আন্দোলন!

এছাড়া ভারতে প্রতিবছর দুই বার গ্যাসের দাম বাড়ায়। এটা তাদের নীতি আর সেই নীতিতে তারা চলে।

গ্যাসের মূলবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা হরতালে ‘বাম-ডান মিলে গেছে এক সুরে’ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাম আর ডান মিলে গেছে। এক সুরে। এই তো? খুব ভালো।’

তিনি বলেন, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি-না? দেশের যদি আমরা উন্নয়ন করতে চাই, এনার্জি একটা বিষয়। এলএনজির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

উল্লেখ্য, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গত ১ জুলাই বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে গত শনিবার (৬ জুলাই) তিনি দেশে ফেরেন।

চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি চীনের দালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) অ্যানুয়াল মিটিংয়ে যোগদান করেন এবং ‘কোঅপারেশন ইন দি প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত ৯টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.