বান্ধবীর বাসায় বোরহানউদ্দিনের ছেলে আশিকের মৃত্যু নানা রহস্য

ফজরের আজান দিয়েছে সবে। সেহরির পর নামাজ শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখন শেখ ফারিহা কলির দরজায় টোকা পড়ে। কলি রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। দরজায় টোকা দিচ্ছিলেন তার সহপাঠী আশিক এ এলাহী। এর পরের ঘটনা রহস্যঘেরা। কলির বাসা থেকেই সকালে উদ্ধার করা হয় আশিকের লাশ। ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কী ঘটেছিলো সেদিন, কিভাবে আশিকের মৃত্যু হয়েছে? এরকম নানা প্রশ্ন তার সহপাঠী, স্বজনদের মধ্যে। আশিকের বান্ধবীসহ বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

সূত্র জানায় ঘটনার আগের দিন রাত থেকে তাদের দু’জনের মধ্যে চলছিলো বাকবিতন্ডা। মোবাইলফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন কলি। আশিক সারারাত যোগাযোগ করতে না পেরে ভোরে চলে আসেন কলির মেসে।

কলি ও আশিক সহপাঠী। অনেকে জানান, তাদের দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তাদের এক বন্ধু বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই। তারা একসঙ্গেই চলাফেরা করে প্রায় সময়। তবে তাদের আরেক বান্ধবী জানান, আশিক কলিকে পছন্দ করতো। কিছুদিন আগে কলির বিয়ের প্রস্তাব আসে। সেই থেকেই শুরু হয় মনোমালিন্য।

এদিকে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কলি জানিয়েছেন, তারা বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন। আশিক তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলেও এড়িয়ে চলতেন তিনি। এরপর পারিবারিকভাবে বিয়ের সম্বন্ধ এলে তাদের বন্ধুত্ব রূপ নেয় শত্রুতায়। এমনকি বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায় আশিক। কলি পুলিশকে জানিয়েছেন, আশিক আত্মহত্যা করেছেন। স্বজনদের অভিযোগ আশিককে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। আত্মহত্যার বিষয়টি মিথ্যা, সাজানো বলে মনে করেন তারা। আশিকের বড় ভাই আল আমিন পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন।

কলির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন আশিক বাসায় গেলে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। আশিক তখন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় হুমকি দেন আত্মহত্যা করার। একপর্যায়ে কলি চলে যান পাশের ঘরে। কিছুক্ষণ পর ওই রুমে যান কলি। জানালার গ্রিলের সঙ্গে প্যান্টের বেল্ট পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আশিককে দেখতে পান তিনি। এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করতে থাকেন কলি। বাসার মালিকসহ আশপাশের লোকজনের সামনে বেল্টটি বটি দিয়ে কেটে নামানো হয় হয় আশিককে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দ্রুত তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর আশিকের বড়ভাইকে ফোন দেয়া হয় কুর্মিটোলা হাসপাতালে আসার জন্য। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার ভোরে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে।

আশিকের বড় ভাই আল আমিন বলেন, আমার ভাই প্রায় ৬ ফিট লম্বা। ৬ ফিট একটা লম্বা ছেলে কি করে গ্রিলের সঙ্গে বেল্ট লাগিয়ে আত্মহত্যা করে? এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, কলির সঙ্গে আমার ভাইয়ের সম্পর্ক ছিলো। এছাড়াও তার আরও এক ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো। সেই ডাক্তার বেশ প্রভাবশালী। কলির সঙ্গে ঝামেলা হবার কারণে সেই ডাক্তার প্রতিশোধ নিবে বলেও জানায় কলি। এই কারণে তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ঘটনার পর থেকেই তদন্ত করছে পুলিশ ও ডিবি। গতকাল বুধবার জিঙ্গাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয় কলি, কলির বান্ধবী, গৃহপরিচারিকা ও কলির মাকে।
ভাটারা থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তাদের আটক করা হয়নি। জিঙ্গাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। তবে তাদের কথার মধ্যে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

বাসায় ভোর বেলা কি করে আশিক প্রবেশ করল? এই প্রশ্নের জবাবে বাড়ির মালিকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ভোর বেলা ফজরের নামাজের জন্য খোলা ছিলো বাড়ির গেট। ওই সময়ে হয়তো আশিক বাসায় ঢুকেছে। ভাটারা থানার ওসি বলেন, আশিকের গলা ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের কোন চিহ্ন মেলেনি। এদিকে, আশিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল তার গ্রামের বাড়িতে সকাল ১০টার দিকে দাফন করা হয়। আশিকের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দীনের দালালপুরে। আর কলির বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। কলি রাজধানীর ভাটারা থানার কুড়িল এলাকার কুড়াতলি বাজারের এক বাসায় ভাড়া থাকেন। তারা দুই বান্ধবী দ্বিতীয় তলার দুই রুমের ফ্লাটটি ভাড়া নিয়েছেন। মানবজমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.