ভোলার মেয়ের হিন্দু ছেলের সাথে প্রেম, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখলেন বাবা-মা ,৯৯৯ কল মা-বাবা গ্রেফতার ।।

বায়েজিদ খান, ভোলা বার্তা ।।

আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অনেক দিন ধরে আমি বন্দী। আপনারা আমাকে উদ্ধার করেন। ফতুল্লা এক কলেজ ছাত্রী
নিজেই ৯৯৯-এ ফোন করে এমনটি জানিয়েছেন পুলিশকে। পুলিশ বুধবার ফতুল্লা শাহজাহান রোলিং মিল এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে।এঘটনায় ঐ তরুনীর বাবা মাকে গ্রেফতার করেছে।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় প্রেমিকের জন্য পাগল কলেজ পড়ুয়া তরুণীকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন তার মা-বাবা এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা-মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার সকালে উপজেলার দাপা শিহাচর শাহজাহান রোলিং মিল এলাকার লোকমান মিয়ার ভাড়াবাড়ির ৫ম তলার ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

 

এসময় শিকলে বাঁধা অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার দক্ষিণ ভাটামারা গ্রামের মৃত. আ. রশিদ পাটোয়ারীর ছেলে বশির উদ্দিন (৫৫) ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪১)। তাদের অবাধ্য মেয়ে সাদিয়া আক্তার (১৯) সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
ভিকটিম সাদিয়া আক্তার জানান, কলেজে আসা যাওয়ার পথে হিন্দুধর্মের সাগর নামে এক যুবক তাকে বিরক্ত করত। এতে সাত মাস যাবত সাগরকে সে চিনে। এরমধ্যে একাধিকবার সাগর তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। এতে সে বাধ্য হয়ে তার প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ওই সময় সাগর কথা দিয়েছিলো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু সাগর তা না করে প্রেমের সম্পর্কে তার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। বিষয়টি তার বাবা-মা জানতে পেরে তাকে অনেকবার বাধা দেন। কিন্তু সে বাধা অমান্য করে ওই যুবকের কাছে চলে যায়।

সে আরো জানান, এ ঘটনায় কয়েক দিন ধরে তার বাবা-মা শিকল দিয়ে পা বেঁধে তাকে ঘরে আটকে রাখেন। পরে চেষ্টা করে শিকল ছুটাতে ব্যর্থ হয়ে সাগরের কথামতে জাতীয় জরুরি নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন করে বলে, ফতুল্লার ওই বাসায় তাকে শিকল দিয়ে কিছু লোকজন বেঁধে রেখেছে। এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এএসআই সোহেল আহমেদ জানান, এ ঘটনায় সাদিয়া আক্তার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীরের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তার নিজ জিম্মায় তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এছাড়া তার বাবা-মায়ের জামিন আবেদন করা হয়েছে। একই আদালতে জামিন শুনানি হয়েছে। পরে আদেশ দেয়া হবে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, জাতীয় জরুরি নাম্বার ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ফতুল্লার দাপা শিহাচর শাহ জাহান রোলিং মিল এলাকায় পুলিশ পাঠাই। সেখানে গিয়ে একটি বাড়িতে তরুণীকে শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এএসআই মো. সাইফুল ইসলাম একটি মামলা করেছেন।

তিনি আরো জানান, মেয়েটি আমাকে জানিয়েছে তাকে ১৪ এপ্রিল থেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন তার বাবা-মা। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে পুলিশ তাকে চিকিৎসা দিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মুঈনুল ইসলাম জানান, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা মানে দণ্ডবিধি আইনের ৩৪২ ধারার অপরাধ। এ মামলায় ওই মেয়ের বাবা-মাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.