মৃত্যুশয্যায় বৃদ্ধা মা, পাশে নেই বিসিএস ক্যাডার-বিত্তবান সন্তানেরা

৮০ বছরের বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের একাকী একটি বাড়িতে। বিসিএস ক্যাডার উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তবান ছেলেরা থাকেন বউকে নিয়ে যার যার নিজস্ব বাসায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মেয়েরা থাকেন স্বামীর বাড়ি। কিন্তু মায়ের স্থান হয়নি কারো কাছেই। গ্রামের বাড়িতে ছোট একটি ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে অযত্ন আর অবহেলায় মৃত্যুমুখী মা। দেখারও কেউ নেই।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির একটি কক্ষে একাকী বৃদ্ধাকে মৃত ভেবে থানায় খবর দেন প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে মৃদুলা সাহাকে। পরে ওই মায়ের দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছে ফেনীর সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’। এমন অমানবিক ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

পুলিশ জানায়, ফেনী পৌরসভার মধুপুর এলাকায় বাড়ির পরিত্যক্ত কক্ষে থাকতেন অসুস্থ বৃদ্ধা মৃদুল সাহা। মারা গেছেন ভেবে মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পায়। তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসক জানান বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত তিনি।

ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, উনি বেশ অসুস্থ। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের যতটুকু দেয়ার সব দিচ্ছি।

চিকিৎসার পাশাপাশি তার প্রয়োজন আপনজনের ভালোবাসা। কিন্তু এই বয়সেও পাশে নেই ভালোবাসার মানুষগুলো। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মধুপুরের ওই বাড়িতে একা থাকেন বৃদ্ধা মা। তার ছেলে বাপ্পি সাহা ও বিপুল সাহা ফেনী শহরে বাবার রেখে যাওয়া চালের আড়তের মালিক।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্য বাসায় থাকেন তারা। সুশান্ত সাহা নামে অপর ছেলে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেয়ে শর্বরী সাহা ও সুমি সাহা ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। ‘প্রতিষ্ঠিত’ পাঁচ ছেলেমেয়ে থাকার পরও নিজের বাড়িতে একা থাকতেন বৃদ্ধা মৃদুল সাহা। তার চিকিৎসা ও দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছে একটি সামাজিক সংগঠন, সিভিল সার্জন ও জেলা পুলিশ।

বৃদ্ধা মায়ের প্রতি সন্তানদের অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ফেনীর পুলিশ সুপার এস.এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি বলেন, ঘটনার আদ্যোপান্ত আসলে তদন্ত শেষে বলা যাবে। তবে মনে হচ্ছে, এই পরিবারের সদস্যরা তার জন্য যতটুকু করার তা সঠিকভাবে করছে না।

পাঁচ সন্তানের জননী মৃদুল সাহার স্বামী হরিপদ সাহা ১৯৮৩ সালে মারা যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.