আমাদের একজন নাবিল হায়দার ছিল যে ‘বিদায়’ জানিয়ে চলে গেল চিরতরে:-

এইচ,এম,মামুনঃ

“সাধারণ জনগণের জন্য নিবেদিত প্রাণ,ভালোবেসে মানুষের মন জয় করা আমার একমাত্র লক্ষ্য”। উদ্বৃতি টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আদনান আহমেদ নাবিলের ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডির এ্যাবাউটে লেখা । আজ নাবিল নেই। তবে; তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের বাস্তবতা আমাদের মাঝে রেখে গেছেন । রেখে গেছেন ছোট্ট জীবনের অনেক বড় বড় প্রাপ্তি। আমাদের মাঝে রেখে গেছেন একজন আদর্শিক মানুষের উদাহরণ।

এমন নির্লোভ নিরহংকার মাটির মানুষ নাবিল কে আমরা রেখে এসেছি অন্ধকার মাটির ঘরে। যে ছেলেটা অন্ধকারে থাকতে পারতো না এক মুহুর্তে, সে কেমন করে ঘুমাবে অন্ধকার কবরে? জানা নাই আমাদের। আমাদের বিশ্বাস আল্লাহ অবশ্যই উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা করবেন তার কবরে ।

নাবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম হল) আবাসিক ছাত্র ছিল সে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং এর আগে নিজ উপজেলা বোরহানউদ্দিনে স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ছিলো। এসব পরিচয়ের উর্ধে ছিল তার মানবিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা বোধ, মানুষের প্রতি উজাড় করা ভালোবাসা ।

নাবিলের গ্রামের বাড়ি দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নে। পারিবারিক সুত্রেই তার রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা । তার বাবা জসিম উদ্দিন হায়দার বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি এবং বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান । তার ছোট চাচা রাসেল আহমেদ মিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যন।

শুক্রবার ০৭/০৪/২৩ তারিখে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় বন্ধুর সঙ্গে ছিলো সে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে -ভাঙা চশমার ‘ছবি দিয়ে সেখানে লিখে-” বিদায় ” পোস্টটি নজর আসে ঢাকার বসুন্ধরায় থাকা তাঁর বড় ভাই তৌসিফ তনয়ের। খিলগাঁওয়ের বাসায় যায় তনয়। ভাইয়ের সাথে ইফতার করে। দেখাশোনা শেষে ফেরার পথে হাতখরচার জন্য কিছু টাকা দিয়ে বাসায় ফিরে যায় তনয়।

শুক্রবার ভোরে সাহ্‌রির সময় নাবিলকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে বন্ধু আশিকের সন্দেহ হয়। তিনি নাবিলকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁর বড় ভাই তৌসিফকে বিষয়টি ফোনে জানান। তনয় ছুটে যায় তার কাছে। অবস্থা বেগতিক দেখে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক ।

ফেইসবুকের স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই ধারণা করেছে নাবিল আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু একজন আদর্শিক বাবার সন্তান নাবিল তা করেনি। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে নাবিলের। নাবিল এতো তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি সহপাঠী, বড় ভাই ছোট ভাই রাজনৈতিক পরিমন্ডলের কেউই। হাজার হাজার মানুষকে কাঁদিয়ে অনন্তকালের যাত্রায় সামিল হয়েছে সকলের প্রিয় নাবিল হায়দার ।

শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নাবিলের জানাজা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অনলবর্ষী বক্তা সাদ্দাম হোসেন যেন কোনো কথাই বলতে পারলেন না। বারবার ঠোঁট কেঁপে উঠছে নাবিলের মৃত্যু শোকে,আর চোখ বেয়ে নেমেছে অঝোর অশ্রু । এবং ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান। এইটুকু ছোট্ট ছেলে যেন হয়ে উঠেছে পুরো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাবিল। শোক প্রকাশ করে শেখ ইনান লিখেছেন -ভালো থেকো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাবিল । অসংখ্য নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান স্বাক্ষরিত দুটি শোকবার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। নাবিল কে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা সম্মোধন করে শোকবার্তা টি প্রকাশ পায়। আরো শোক বার্তা দিয়েছে, ভোলা জেলা ছাত্রলীগ। বোরহানউদ্দিন উপজেলা/পৌর ছাত্রলীগ। সরকারি আব্দুল জব্বার কলেজ ছাত্রলীগ। ভোলা পলিটেকনিক ছাত্রলীগ এবং আওয়ামিলীগ সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ।

পরে তাঁর মরদেহ ভোলায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সাথে আসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একঝাঁক উদীয়মান নেতৃবৃন্দ । দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ভোলা সদরে এবং সর্বশেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বড় মানিকা হাইস্কুল মাঠে। হাজার হাজার শুভাকাঙ্ক্ষী অংশ গ্রহন করে জানাজায়।

জানাজায় উমরাহ হজ্ব থেকে ফিরেই অংশ গ্রহন করে ভোলা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আলি আজম মুকুল। বোরহানউদ্দিন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম। অসংখ্য অগনিত মানুষের ভালোবাসায় এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে যথাযোগ্য মর্যাদায় শেষ ঠিকানায় শায়িত হয় আমাদের প্রিয় নাবিল। ভালো থেকো নাবিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.