ভোলার ছেলে গোল্ড মেডেলিস্ট জাকির: অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়ায় জেদ ছিল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জাকির হোসনে। তিনি একাডেমিক সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ২য় বারের মত এএফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। বর্তমান তিনি নিজ বিভাগেরই প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার এ সফলতার পিছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও কষ্টের গল্প। তার গল্প লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

ভোলা জেলার,  দুলারহাট থানার এক অসচ্ছল পরিবারে জন্ম জাকিরের। শিশুকাল থেকেই প্রচন্ড অর্থ কষ্টে ভুগেছেন। অন্য আর ১০টা ছেলের মত আড্ডাবাজি করে কখনো সময় নষ্ট করতেন না। সারাদিন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতেন। এর ফলাফল ও হাতেনাতে পেয়েছেন । পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে পেয়েছেন মেধাবৃত্তি। এসএসসি ও এইচএসসিতে ও ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রেখে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। ভালো শিক্ষার্থী হওয়ায় শিক্ষকরাও সহযোগিতা করেছেন সব সময়।

স্কুলের বেতন, প্রাইভেট খরচের টাকা কোনো কিছুই দিতে হয়নি তাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করার টাকা ও কলেজের শিক্ষকরা দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি নেয়ার সময় ও থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানোর জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত টিউশনি করতে হয়েছে। তারপর মেসে ফিরে গভীর রাত জেগে চলেছে ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার অদম্য প্রচেষ্টা। তারপর ২০০৯-১০ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন।

বাল্যকাল থেকেই গণিতের প্রতি আলাদা টান ছিল বলে ভর্তি হলেন গণিত বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানোর জন্য টিউশনি করতে হয়েছে। অর্থের অভাবে কোনো কোনো দিন একবেলা খেয়েও কাটিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কোনোদিন ক্লাস মিস করেননি। সামনের সারিতে বসে শিক্ষকদের লেকচার মনোযোগ সহকারে খাতায় তুলতেন। আবার তা বাসায় গিয়ে রিভিশিন দিতেন। সেমিনার লাইব্রেরী থেকে বিভিন্ন রেফারেন্স ঘেঁটে নোট করে পড়তেন। কোনো কিছু না বুঝলে শিক্ষকদের কাছে যেতেন।

এভাবে পড়ালেখা করে অনার্সে গণিত বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৯২ অর্জন করেন। অর্নাসে ভালো ফলাফল করায় ১ম এ এফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল পান। এ অর্জন তাকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। মাস্টার্সেও ভালো ফলাফলের ধারা বজায় রেখে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ পেয়ে রেকর্ড করেন জাকির। মার্স্টাসের এ অভাবনীয় ফলাফলের কারণে তিনি আবারো এ এফ মুজিবুর রহমান গোল্ড মেডেল পান। অর্নাস শেষ হতে না হতেই তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

নানা প্রতিকূতার মাঝেও এতদূর কিভাবে আসা সম্ভব হলো জানতে চাইলে জাকির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা আমাকে সব সময় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, সাথে মা-বাবার দোয়া ও সহপাঠিদের উৎসাহ ছিল। আর অসচ্ছল পরিবারে জন্মেছিলাম বলে ছোটবেলা থেকেই মনের মধ্যে একটা জেদ কাজ করতো। সে জেদের জন্যই প্রচন্ড পরিশ্রম করতাম। পরিশ্রমই সফলতার মূলমন্ত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.