ভোলায় শেলটেক-বিআইডাব্লিউটিএ’র বালু বাণিজ্যের তদন্তে দুদক

ভোলায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে কোটি টাকার বালু বাণিজ্য চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত।
এ নিয়ে গত বছরের ১৬ অক্টোবর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় ‘ভোলায় কোটি টাকার বালু বাণিজ্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর দুর্নীতির বিষয়টি নজরে আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন ভোলা জেলা প্রশাসককে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন পঠানোর নির্দেশ দেয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে ভোলা জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামসহ একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করে। তাঁরা বালু বাণিজ্যের কারণে তেঁতুলিয়া নদীর দুই পাশে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার প্রমাণ পান। তবে এখনো তদন্ত চলছে। আগামী এপ্রিল মাসে এর প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সূত্র জানায় নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় ভোলা বরিশাল ও ভোলা ঢাকা রুটের তেঁতুলিয়া নদীতে ক্যাপিটেল ড্রেজিং চলছে। তবে যেখানে খনন করার কথা সেখানে না করে অন্য জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভোলায় শেলটেক সিরামিক কম্পানির ২০ থেকে ২৫ একর জমি প্রায় ১০ ফুট উঁচু করে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭৫ লক্ষ ফুট বালু দিয়ে।
এ জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে, যেখানে তারা বালু বিক্রি করতে পারবে সেখানেই কেটেছে। এর ফলে ছোট নদীর কিনারায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বালু তোলার ফলে ভোলা সদরের সদুর চর ও জাঙ্গালিয়া মৌজার তেঁতুলিয়া নদীর দুই পাশে কয়েক হাজার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে গেছে। এখানে সরকারের তেল খরচ করেন বিআইডাব্লিউটিএ ও শেলটেকের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা।
এদিকে, এলাকাবাসী অনেকবার প্রতিবাদের চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তারা তাঁদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কখনো আবার এলাকাবাসীর ছবি মোবাইলে তুলে রাখছেন তাঁরা এবং বলে বেড়াচ্ছেন, ‘ছবি তুলে রাখলাম। এবার দেখে নেব।’
তবে স্থানীয়রা শেলটেক ও বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তা ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস করেনি। এ বিষয়গুলোও স্থানীয় বাসিন্দা কাঞ্চন, টুনু , বেলাল, তরুসহ অনেকে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়, এ নদী খুব শান্ত, গত ১০ বছরে দুই হাত জায়গাও ভাঙেনি। ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-ঢাকা রুটের ছোট-বড় অর্ধশতাধিক লঞ্চ এর ওপর দিয়ে চলাচল করে। তাদের যেখানে সমস্যা সেখানে বালু না কেটে অন্য যায়গা থেকে বালু কাটা হচ্ছে।
এলাকাবাসী আরো জানায়, এর আগে ওই কম্পানি প্রায় ২৫ একর জমি বালু দিয়ে ভরাট করেছে। সে সময় বালুগুলো বাইরের নদী থেকে জাহাজে করে এনে এখানে ফেলা হতো। সেখানে তাদের প্রায় এক কোটি ফুট বালু ভরাট হয়েছে। এ জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন আরো প্রায় ২৫ একর জমি ভরাট চলছে। এর ফলে এক কোটি ফুট বালু লাগবে। সেখানেও পাঁচ কোটি টাকার বালু লাগবে। তাই বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে শেলটেককে সরকারের তেল খরচ করে বালু দেওয়া হয়েছে।
তবে শেলটেক থেকে বলা হচ্ছে সরকারকে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে বালু দেওয়া হচ্ছে। যদি তাও হতো তাহলে সেই বালু বড় নদীতে ড্রেজিংয়ের সময় কেটে এখানে এনে ফেলার কথা সবার। তা না করে সদর উপজেলার হাক্কা ঘাটা, ফরিদ মেম্বার বাড়ি, বাঘার হাট, গাজী বাড়ির এলাকাসহ শতাধিক এলাকা থেকে বালু কেটে বিক্রি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এর ফলে আজ দুই হাজার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
সুত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ